DOS (Disk Operating System) এবং Windows হলো দুটি ভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম, যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে ইন্টারফেস হিসেবে কাজ করে। DOS এবং Windows উভয়ই মাইক্রোসফট দ্বারা তৈরি, তবে তাদের গঠন, ব্যবহার এবং কার্যক্ষমতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
DOS (Disk Operating System):
DOS হলো একটি প্রাথমিক এবং টেক্সট-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম, যা ১৯৮০-এর দশকে কম্পিউটারের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হতো। DOS-এর কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং তথ্য:
১. টেক্সট-ভিত্তিক ইন্টারফেস:
DOS-এ কোন গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) নেই; এটি কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস (CLI) ব্যবহার করে। ব্যবহারকারীরা কমান্ড টাইপ করে কাজ সম্পন্ন করেন।
উদাহরণস্বরূপ, DIR কমান্ড ব্যবহার করে ডিরেক্টরির ফাইল দেখানো যায় এবং COPY কমান্ড দিয়ে ফাইল কপি করা যায়।
২. সিঙ্গেল-টাস্কিং:
DOS শুধুমাত্র একটি কাজ এক সময়ে করতে সক্ষম ছিল। অর্থাৎ, একসঙ্গে একাধিক প্রোগ্রাম চালানো সম্ভব ছিল না।
৩. সীমিত মেমোরি অ্যাক্সেস:
DOS সাধারণত ৬৪০ কিলোবাইট মেমোরি পর্যন্ত অ্যাক্সেস করতে পারত, যা বর্তমানে ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় খুবই সীমিত।
৪. ফাইল সিস্টেম:
DOS সাধারণত FAT (File Allocation Table) ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করত, যা ডিস্কে ফাইল এবং ফোল্ডারগুলির গঠন নিয়ন্ত্রণ করত।
৫. হালকা ও কম জটিল:
DOS খুবই হালকা এবং কম জটিল অপারেটিং সিস্টেম, যা ছোট স্টোরেজে সহজেই কাজ করতে পারত। তবে, এটি আধুনিক কম্পিউটার সিস্টেমে ব্যবহৃত হয় না কারণ এটি GUI এবং মাল্টিটাস্কিং সাপোর্ট করে না।
Windows:
Windows হলো একটি আধুনিক এবং গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম, যা DOS-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে তবে অনেক উন্নত সুবিধা এবং বৈশিষ্ট্য প্রদান করে। Windows-এর কিছু বৈশিষ্ট্য:
১. গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI):
Windows-এ গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের মাউস এবং গ্রাফিক্সের সাহায্যে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে দেয়। এতে টেক্সট কমান্ডের বদলে মেনু, উইন্ডো, এবং আইকন ব্যবহার করা হয়।
এটি ব্যবহারকারীদের কাজকে আরও সহজ এবং ইন্টারেক্টিভ করে তোলে।
২. মাল্টিটাস্কিং সাপোর্ট:
Windows একসঙ্গে একাধিক প্রোগ্রাম চালানোর ক্ষমতা রাখে, যা মাল্টিটাস্কিং সহজ করে তোলে। ব্যবহারকারীরা একাধিক উইন্ডো খুলে একসঙ্গে কাজ করতে পারেন।
৩. বিস্তৃত মেমোরি অ্যাক্সেস:
Windows বড় আকারের RAM ব্যবহার করতে পারে, যা কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং বড় সফটওয়্যার এবং প্রোগ্রাম চালাতে সহায়ক।
৪. আধুনিক ফাইল সিস্টেম:
Windows সাধারণত NTFS (New Technology File System) ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করে, যা নিরাপত্তা, বড় ফাইল সাপোর্ট, এবং ডেটা অখণ্ডতা বজায় রাখতে উন্নত বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।
৫. হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের বিস্তৃত সমর্থন:
Windows বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সঙ্গে সমর্থন প্রদান করে। এতে বিভিন্ন ড্রাইভার, ইউটিলিটি, এবং অ্যাপ্লিকেশন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের একটি সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেম প্রদান করে।
DOS এবং Windows-এর তুলনা:
বৈশিষ্ট্য
DOS
Windows
ইন্টারফেস
টেক্সট-ভিত্তিক CLI
গ্রাফিক্যাল GUI
মাল্টিটাস্কিং
সিঙ্গেল-টাস্কিং
মাল্টিটাস্কিং সাপোর্ট
মেমোরি অ্যাক্সেস
সীমিত মেমোরি (৬৪০ কিলোবাইট)
বড় মেমোরি অ্যাক্সেস (গিগাবাইট)
ফাইল সিস্টেম
FAT
NTFS
ইউজার এক্সপেরিয়েন্স
টেক্সট কমান্ড, জটিল
মাউস, আইকন, উইন্ডো, সহজ এবং ইন্টারেক্টিভ
Windows-এর DOS ভিত্তিক সংস্করণ:
প্রথমদিকে, Windows DOS-এর ওপর ভিত্তি করে কাজ করত। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্করণ হলো:
Windows 1.0, 2.0, এবং 3.x: এগুলি ছিল DOS-এর ওপর তৈরি গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস, যা DOS কমান্ডের পাশাপাশি GUI সাপোর্ট প্রদান করত।
Windows 95, 98, এবং ME: এগুলি এখনও DOS-এর ওপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু আরও উন্নত GUI এবং মাল্টিমিডিয়া সাপোর্ট নিয়ে আসে।
Windows NT, 2000, এবং XP: এই সংস্করণগুলোতে DOS নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসে এবং সম্পূর্ণরূপে ৩২-বিট এবং ৬৪-বিট আর্কিটেকচারে তৈরি হয়, যা Windows-এর স্টেবিলিটি এবং পারফরম্যান্স বাড়ায়।
সারসংক্ষেপ:
DOS হলো একটি প্রাথমিক, টেক্সট-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম যা একটি সিঙ্গেল-টাস্ক অপারেশন পরিচালনা করতে সক্ষম। অন্যদিকে, Windows হলো একটি আধুনিক, গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম, যা মাল্টিটাস্কিং, উন্নত মেমোরি ম্যানেজমেন্ট এবং গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস সাপোর্ট প্রদান করে। DOS এবং Windows-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, Windows-এর প্রথম দিকের সংস্করণগুলো DOS-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, যা সময়ের সঙ্গে আরও উন্নত হয়েছে।